মোঃ ইমানুর রহমান,জেলা প্রতিনিধি, খুলনা,
খুলনার তেরখাদা ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। নামজারি মিস কেস, বিআরএস খতিয়ান মুদ্রণে জমির শ্রেণি, দাগ, পরিমাণ ভুল সংশোধন সব ক্ষেত্রেই নির্ধারিত টাকার কয়েকগুন আদায় করছে দালালরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অফিসে কর্মকর্তাদের সাথে দালালদের গোপন আঁতাত রয়েছে। ফলে খাজনা দিতে এলে প্রভাবশালী দালালদের নানা প্রকার অলিখিত নিয়মের কাছে জিম্মি হতে হয়।
জানা যায়, ৫০-৭০ টাকার দাখিলা কাটতে গুনতে হয় চার-পাঁচ হাজার টাকা। নামজারি কেসের ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন নিতে গেলে গুনতে হয় ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এদিকে টাকা দিলেও তাৎক্ষনিক মেলে না নথিপত্র। নানাভাবে দালালদের পিছনে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। দালাল না ধরে সরাসরি অফিসে গেলে পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। আবার অফিসের ভিতরে গেলে ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তার বহিরাগত ভাগ্নের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
এরই মধ্যে ভুক্তভোগীরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ইউএনও সহ বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উপজলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. জনাব আলী শেখ গত ৭ নভেম্বর ইউনিয়ন ভুমি অফিসে দাখিলা কাটতে গেলে ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা জালাল হোসেন ১.৭০ একর জমির এক বছরের খাজনার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। জনাব আলী অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) আব্দুর রউফের মাধ্যমে উক্ত টাকা দেন। তখন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা জালাল হোসেন তাকে পরে আসতে বলেন। কিন্তু ওইস্থানে হাসপাতাল নির্মানের কথা রয়েছে জানিয়ে দাখিলা দ্রুত প্রয়োজন জানালে ভূমি সহকারি কর্মকর্তা জালাল হোসেন আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করেন।
তিনি বলেন, কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতাল করবেন, আর আমাদের কিছু দিবেন না? এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. জনাব আলীকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ব্যাপারে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
একইভাবে উপজেলার আদমপুর এলাকার গগন শেখের জমি মিউটেশন করার জন্য ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা নেয়ার পরও মিউটেশন কাগজ তাকে দেয়া হয়নি। একই এলাকার তায়েব আলী কাছ থেকে খাজনার দাখিলা দিতে পাঁচ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। তেরখাদা দক্ষিণ পাড়া এলাকার আলী গফফার মোল্লা বলেন, ভূমি কর্মকর্তা জালাল হোসেনের অর্থ বাণিজ্যের ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ৮ আগস্ট খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। একই দিন তেরখাদা থানায় তার বিরুদ্ধে জিডি হয়েছে।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন জানা যায়, উপজেলার ইখড়ি এলাকার নাদিম শেখের ৪৪ শতক জমির খাজনার দাখিলা কাটতে জালাল হোসেন চার হাজার টাকা নিয়ে মাত্র ৪০ টাকার দাখিলা দিয়েছেন। এছাড়া আটলিয়া এলাকার তৌহিদ শিকদারের কাছ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ৪০ টাকার দাখিলা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, দাখিলা কাটতে গেলে একটা নিয়ম আছে, কেউ যদি কোন অন্যায় আবদার করে থাকে তাহলে তো হবে না। যদি কেউ মারা গিয়ে থাকে তাহলে তো নিবেনা, অবশ্যই নতুন করে হোল্ডিং খুলে নতুন করে দাখিলা নিতে হবে। এখনও কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply