মোহাম্মদ মিলন আকতার, ঠাকুরগাঁ জেলা প্রতিনিধি : বাংলাদেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করে রস আহরণ শুরু করেছেন। রস আহরণের জন্য প্রথমে হাতে দাও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছ চাছা-ছেলা করেন,পরে ছেলা স্থানে বাঁশের কঞ্চির নল বসানো হয়। সেই নল বেয়ে নেমে আসে সুস্বাদু খেজুর রস।
নওগাঁ থেকে গাছিরা ঠাকুরগাঁওয়ে এসে খেজুর বাগানে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করছেন।
পাখি ডাকা ভোর থেকে সকাল ৮/৯টা পর্যন্ত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গাছিরা। দুপুর পর্যন্ত রস জাল দিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রস সংগ্রহের জন্য গাছে গাছে হাড়ি বাঁধা হয়। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা।
স্থানিয় সুত্রে জানা যায়, কয়েকযুগ আগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন মোগন ইক্ষু খামারে ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের উদ্যোগে প্রায় ১৫০০টি খেজুরের গাছ নিয়ে গড়ে ওঠে একটি বাগান, অযত্নে ও ফসলি আবাদের কারনে অনেক গাছ নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে বাগানে ৭০০টির মতো খেজুরের গাছ রয়েছে।
গাছিরা জানান, খেজুরের রস পেতে হলে বেশ কিছু কাজ করতে হয়। গাছের উপরিভাগের নরম অংশকে কেটে সেখানে বসিয়ে দেয়া হয় বাঁশের তৈরি নালা। আবার পাখিরা যাতে রস না খেতে পারে আর কোন জীবাণু না ছড়াতে পারে, সেজন্য আবার জাল বিছাতে হয়।
গাছের কাটা অংশ থেকে চুইয়ে-চুইয়ে রস এনে নল দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় জমা হয় মাটির কলসিতে। একবার গাছ কাটার পর ২-৩ দিন রস পাওয়া যায়। রসের জন্য গাছ একবার কাটার পর ৫-৬ দিন বিশ্রাম দেয়া হয়। রোদে কাটা অংশ শুকিয়ে গেলে আবার ওই অংশ চেছে রস সংগ্রহ করা হয়। আর এ কারণেই সাধারণত খেজুর গাছ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কাটা হয়, যাতে সূর্যের আলো সরাসরি ওই কাটা অংশে পড়ে।
নাটোর থেকে আসা গাছি আব্দুল মালেক বলেন, আমি দেশে অনেক যায়গায় রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজে গিয়েছি কিন্তু আমাদের উত্তরবঙ্গে এক জায়গায় সাজানো এত সুন্দর ও এতো বড় বাগান আর কোথাও দেখিনি।
দর্শনার্থী হুমায়ুন কবির বলেন, মোহন ইক্ষু খামার খেজুর বাগানের আমরা টাট্ক রস ও প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি গুড় পাচ্ছি যা গুড় অনেক সুস্বাদু এখানকার গুড় জেলা পেরিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানের মানুষ এসে নিয়ে যাচ্ছে। এ বাগানটির অনেক বরো এটিকে পরিচর্যা করা খুবই প্রয়োজন বাগানের অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো রোপন করা প্রয়জন। এখানে খেজুর বাগানকে ঘিরে বিভিন্ন দোকানো বসতে শুরু করেছে ।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের আওতায় থাকা এ খেজুর বাগানটি ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকায় বাগানের ৭ শতাধিক গাছ লিজ নিয়েছি। নাটোর থেকে ৮ গাছি দিয়ে রস সংগ্রহ ও গুর তৈরি করা হচ্ছে।শীত বারলে গাছ থেকে রশের পরিমানো বৃদ্ধি পাবে এবং গুড় উৎপাদন বারবে বলে জানান তিনি।
সারাদিন খেজুরের রস সংগ্র ও গুড় তৈরি দেখতে ও গুড় কিনতে সারাদিন ভিড় করছেন শত শত ক্রেতা ও দর্শনার্থী। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী খেজুরের রস পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন খেজুর বাগানের লিজ গ্রহীতা। যা কেজি প্রতি বিক্রি করা হয় ২৫০ টাকায়।
স্থানীয়রা জানান , নতুন করে কেউ খেজুরের বাগান করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয় আর এ বাগানটির বয়স অনেক বাগানটি পরিচর্যা করা খুবই দরকার। এ জেলায় খেজুরের গাছ রোপণের ক্ষেত্রে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। সবাই আম, কাঁঠাল আর লিচু নিয়েই ব্যস্ত। সব গাছেরই প্রয়োজন আছে। তিনি খেজুর বাগান উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানান।
Leave a Reply