1. admin@bijoy52tv.com : bijoy52tv :
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪১ অপরাহ্ন

বিজয় ৫২ টিভি
  • আপডেট সময়ঃ রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৭৫ জন দেখেছেন

 

                     ভালোবাসার জয়

                      ওবায়দুল সমীর

 

একদা, এক গভীর বনে এক ভয়ংকর রাক্ষস বাস করত। তার নাম ছিল কামরাক্ষি। তার দৈত্যের মতো চেহারা দেখে যে কেউ ভয়ে কাঁপত। কেউ কখনো এই বনের আশেপাশেও যেত না। কেউ ভুল করে এই বনে ঢুকে পড়লে আর ফেরত আসতো না। এমনকি পশুপাখিও এই রাক্ষসের হাত থেকে রেহাই পেত না। খাদ্যের অভাবে মাঝে মধ্যেই লোকালয়ে হানা দিয়ে একে ওকে, এটা ওটা ধরে নিয়ে যেত। রাক্ষসের ভয়ে আশেপাশের লোকালয়ের লোকজন তটস্থ থাকত। কখন জানি রাক্ষসের কবলে পড়ে নিজের প্রাণটা হারাতে হয়।

 

কামরাক্ষির চেহারা ছিল বিশাল। মুখের দাঁতগুলো তীক্ষ্ণ ও সাদা মুলা’র মতো বড় বড় এবং চোখ দুটি ছিল যেন গনগনে লাল আগুনের চুল্লির মতো। যেকোনো সময় কারও প্রাণ কেড়ে নেবে এমনি তার ভাবভঙ্গি। তার হাতের আঙ্গুলগুলো ছিল খুবই ধারালো তরবারি মতো। আর তার গলা থেকে সব সময় ভয়ংকর গর্জন শুনা যেত, যেটি বনের সমস্ত প্রাণীকে আতঙ্কিত করে রাখত।

 

কামরাক্ষির জন্ম হয়েছিল এক জাদুকরের অভিশাপে। একসময় সে ছিল এক সাধারণ মানুষ। তার হারানো ভালোবাসার জন্য সে জাদুকরের কাছে গিয়ে নেক্কারজনক এক অন্ধকার জাদু চেয়েছিল। যাদুকর তাকে যাদু শেখাতে না চাইলেও কামরাক্ষি অল্প দিনেই যাদুকরের ফাই ফরমাশ খেটে আস্থাভাজন হয়ে উঠে। যাদুকর তাকে যাদুর উত্তরসুরী বানানোর আশায় একে একে যাদুবিদ্যায় পারদর্শী করে তুলতে থাকে। যাদুকরের বিশ্বাসী হয়ে উঠার একপর্যায়ে কামরাক্ষিকে মানুষকে পশু বানানোর বিদ্যা শিখিয়ে দেয়। মানুষকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার মন্ত্র না শিখেই কামরাক্ষি যাদুকরের ডেরা থেকে বেরিয়ে আসে। পথে বেরিয়ে একটা মেয়েকে দেখতে পেয়ে মেয়েদের প্রতি চরম ক্ষোভের কারনে মেয়েটিকে মন্ত্রবলে বুনো কুকুর বানিয়ে দেয়। কামরাক্ষি জানতো না মেয়েটি যাদুকরের মেয়ে ছিল।

বিদ্যাটি শিখিয়ে দিয়ে এই মন্ত্রের প্রভাবমুক্ত থাকায় যাদুকর তার মেয়েকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়ে কামরাক্ষিকে অভিশাপ দেয়। যার ফলে কামরাক্ষির আত্মা পরিণত হয়েছিল ভয়ঙ্কর এক দৈত্যে। সেই অভিশাপের কারণে কামরাক্ষি এক অন্ধকার রাজ্যে বন্দী হয়েছিল।

 

একদিন এক সাহসী তরুণ রাজপুত্র, নাম ছিল কনক। সে বন-বাদাড়ে ঘুরে শিকার করতে ভালবাসত। শিকারের নেশায় ঘুরতে ঘুরতে ওই বনের ধারে চলে আসে। সে লোকালয়ে ঢুকতেই এই বনের ভয়ংকর রাক্ষসটির কথা শুনেছিল। সে ভাবতে লাগল কিভাবে রাক্ষসের হাত থেকে লোকালয়কে নিরাপদ রাখা যায়। কিভাবে বনটিকে রাক্ষস মুক্ত করা যায়।

 

রাজপুত্র ছিল এক শক্তিশালী যোদ্ধা, কিন্তু কামরাক্ষির সাথে মোকাবিলা করার জন্য তার প্রয়োজন ছিল জ্ঞান এবং কৌশলের।

 

রাজপুত্র প্রথমে এক জ্ঞানী বৃদ্ধার কাছে গিয়ে জানতে চাইল, “কীভাবে আমি এই রাক্ষসকে পরাজিত করতে পারি?”

বৃদ্ধা তাকে বললেন, “তুমি যদি সেই রাক্ষসের ভিতরে থাকা মানবিক আত্মা মুক্ত করতে পারো, তবে সে তার শক্তি হারাবে। কিন্তু মনে রেখো, কামরাক্ষি একসময় মানুষ ছিল, আর তার হৃদয়ে এখনও মানুষের মতো কিছু ভালোবাসা থাকতে পারে।”

 

রাজপুত্র কনক বৃদ্ধার পরামর্শ নিয়ে যাত্রা শুরু করল। বনের গভীরে যেতে তাকে নানা ধরণের বিপদ ও বাধা অতিক্রম করতে হল। অনেক ঘোরাঘুরির পর এক সময় সে কামরাক্ষিকে দেখতে পেলো এক পুরনো বট গাছের নিচে বিশাল দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

 

কামরাক্ষি কনককে দেখে রাগান্বিত হয়ে গর্জন করতে থাকে, “তুমি কি আমার সামনে এসেছো আমাকে হত্যা করার জন্য?”

তবে কনক ভয় না পেয়ে ভালোবাসা মেশানো শান্ত কন্ঠে বলল, “তুমি তো একসময় মানুষ ছিলে, তুমি কি মনে করো যে এই রাক্ষস রূপে তোমার শক্তি চিরকাল থাকবে?”

 

কামরাক্ষি  রাজপুত্র কনকের কথায় কিছুটা থামল। কনক বৃদ্ধার শিখিয়ে দেয়া এক প্রাচীন মন্ত্র পাঠ করতে শুরু করল। মন্ত্রটি উচ্চারণের সাথে সাথে  কামরাক্ষির বিশাল দেহ থেকে অন্ধকার অশুভ শক্তি বেরিয়ে আসতে থাকে। কিছুক্ষণ পর, কামরাক্ষির বিশাল আকার ছোট হতে থাকে এবং তার চোখে মানবিক দৃষ্টি ফিরে আসে।

 

অবশেষে, কামরাক্ষি তার রাক্ষস রূপ হারিয়ে শান্ত ও দয়ালু চেহারায় পরিণত হয়। সে বলল, “ধন্যবাদ, রাজপুত্র। তুমি আমাকে অভিশাপ মুক্ত করলে। আমি এখন মুক্ত, আমি কখনোই আর কারো ভয়ের কারন হবো না।”

 

কনক তার সাহস ও ভালোবাসার শক্তি দিয়ে কামরাক্ষিকে মানুষ রূপে ফিরিয়ে আনল। আর বনটি আবার শান্ত হয়ে গেল। তখন থেকে সেই বনটি একটি সুন্দর জায়গা হয়ে উঠল এবং লোকালয়ের সবাই শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

 

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো খবর পড়ুন
© All rights reserved © 2025
Developer By Zorex Zira