নিজস্ব প্রতিবেদক:-
“বাংলাদেশ আমার অহংকার”এই স্লোগান নিয়ে র্যাব যুব সমাজ তথা বাংলাদেশকে মাদকের ভয়াল থাবা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ছিনতাই, ডাকাতি, জুয়া, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারসহ বিভিন্ন ধরণের অবৈধ কর্মকান্ড থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশব্যাপী আপোষহীন অবস্থানে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, ভিকটিম ১। রফিকুল তালুকদার (৩৬) একজন মাংস ব্যবসায়ী (কসাই)। তিনি গতকাল টাঙ্গাইল জেলার ভুঞাপুর থানাস্থ গোবিন্দাস বাজারে নিজ দোকানে গরুর মাংস বিক্রি করিতেছিলো । সকাল অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকার সময় হঠাৎ একটি সাদা রংয়ের হাইস মাইক্রো গাড়ী ভিকটিমের দোকানের সামনে এসে থামে। উক্ত হাইস মাইক্রো হইতে সিভিলে ৬/৭ জন লোক নেমে তারা নিজেদেরকে প্রথমে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে চোরাই গরুর মাংস বিক্রি করার অজুহাতে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য বলে। ভিকটিম তাদের সাথে যেতে না চাইলে আসামীরা ক্যাশ বাক্স হইতে নগদ অনুমান ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা সহ ভিকটিমকে জোরপূর্বক টেনে হেঁচড়ে তাদের মাইক্রোতে তোলে। ঐ সময় ০১ নং আসামী মোঃ রাসেল মাহাবুবুল নিজেকে র্যাবের মেজর পরিচয় দিয়ে ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং চিৎকার করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে তারা ভিকটিমের স্ত্রীকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে।
একই দিন অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় উক্ত আসামীরা ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানাধীন নিমুরিয়া হাইস্কুলের সামনে রাস্তায় আসিয়া পৌঁছাইলে ভিকটিম ২। মোঃ আসাদুজ্জামানকে (বাংলালিংক কোম্পানীর সেলস্ ম্যান) মোটর সাইকেলসহ থামানোর জন্য সিগন্যাল দেয়, তখন ভিকটিম মোটরসাইকেল থামাইয়া দাড়ায়।
মাইক্রোতে থাকা আসামীরা র্যাবের এবং ডিজিএফআই এর আইডি কার্ড দেখিয়ে ভিকটিমকে গাড়ীতে তোলে এবং উক্ত ভিকটিম এর কাছে থাকা মোটরসাইকেলটি একজন অপহরণকারী চালিয়ে নিয়ে যায়। উক্ত ভিকটিম আসাদুজ্জামানকে গাড়ীতে তোলার পর তাকেও উল্লেখিত আসামীরা অস্ত্রের ভয় দেখায় এবং এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম করে। উক্ত ভিকটিমের পরিবারের নিকট মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবি করে
একই দিন অনুমান ১৪.০০ ঘটিকার সময় ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানাধীন বাগান গ্রামের রাঙ্গামাটি এলাকায় ঢাকা টু ময়মনসিংহ গামী পাকা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভিকটিম ৩। মোঃ হাফিজুল ইসলাম (মুদি দোকানের কর্মচারী) এর নিকট মাইক্রোটি দাঁড়ায় এবং আসামীরা তাকে মাইক্রোর কাছে ডাক দেয়। ডাক দিলে ভিকটিম মোঃ হাফিজুল ইসলাম কাছে আসিলে ০১ নং আসামী নিজেকে র্যাবের মেজর পরিচয় দিয়ে উক্ত ভিকটিমকে জোরপূর্বক গাড়ীতে তুলে নেয়। একই কায়দায় মোঃ হাফিজুলকে হাত পা বেঁধে আসামী তাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। তার পকেট হইতে মালিকের দেয়া মুদি দোকানের মালামাল ক্রয় করা বাবদ নগদ ৪০,০০০/- হাজার টাকা তার শার্টের পকেট হইতে জোরপূর্বক বের করে নেয় এবং কথা বলতে নিষেধ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসামীরা মাইক্রোটি চলতে থাকে।
উক্ত ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অধিনায়ক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে উপপরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন এবং এএসপি মোঃ আব্দুল হাই চৌধুরী এর নেতৃত্বে র্যাব—১৪, ময়মনসিংহের একটি আভিযানিক দল গত ০১/১১/২০২৩ ইং তারিখে আনুমানিক ১৬.০০ ঘটিকার সময় ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানাধীন স্কয়ার মাষ্টার বাড়ী জামিরদিয়া মায়ের মসজিদ এর নিকট পলো স্টোর দোকানের সামনে থেকে আসামী ১। রাসেল মাহাবুবুল @ রাসেল(৪৩), পিতা—মোঃ মজিবুর রহমান, সাং—আমিনপুর, থানা—সিরাজগঞ্জ সদর, জেলা— সিরাজগঞ্জ, ২। মোঃ মনির হোসেন (৪০), পিতা—মৃত মোঃ আলী শেখ, সাং—খানকা দালাল পাড়া, থানা—মুন্সিগঞ্জ সদর, জেলা—মুন্সিগঞ্জ, ৩। মোঃ মুছা শেখ (২৪), পিতা—মোঃ শাহাদাত হোসেন, সাং—ছনগাছা গোপীরপাড়া, থানা—সিরাজগঞ্জ সদর, জেলা—সিরাজগঞ্জ, ৪। মোঃ সবুজ বিশ্বাস (২৪), পিতা—মোঃ আতিয়ার বিশ্বাস, সাং—কবিরপুর, থানা—শৈলকুপা, জেলা—ঝিনাইদহ দেরকে গ্রেফতার করে। ধৃত আসামীদের হেফাজত হতে ভিকটিম মোঃ রফিকুল তালুকদার, মোঃ আসাদুজ্জামান ও মোঃ হাফিজুল ইসলামদেরকে উদ্ধার করা হয়। আসামীদের হেফাজত হতে ৫ রাউন্ড গুলি সহ একটি বিদেশী পিস্তল, র্যাবের দুইটি ভুয়া আইডি কার্ড, ডিজিএফআই এর ভুয়া আইডি কার্ড, ৫টি বাটন মোবাইল ফোন, একটি সাদা রংয়ের হায়েস মাইক্রো, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স টোকেন, রোড পারমিট সার্টিফিকেট, ফিটনেস সনদপত্র, একটি চাবি ও ছিনতাইকৃত ৬৬,৫৮৪/-(ছেষষ্টি হাজার পাঁচশত চুরাশি) টাকা উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তারা স্বেচ্ছায় উল্লেখিত ঘটনা অকপটে স্বীকার করে এবং আরো বলে যে, তাদের সহযোগী ৫ নং আসামী রানা ও ৬ নং আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর এবং অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মোটর সাইকেল যোগে পালিয়ে গিয়েছে। ধৃত আসামীরা আরো স্বীকার করে যে, তারা দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া ডিবি/ র্যাবের পরিচয় দিয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম করিয়া আসছে বলে জানায়। ইতোপূর্বে আসামী রাসেল এর নামে অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪ টি মামলা এবং আসামী মনির এর নামে একটি মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১০/০৭/২০২৩ খ্রি. তারিখে ময়মনসিংহের ভালুকায় বীকন গ্রুপের জনৈক কর্মচারী ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা নিয়ে অফিসে যাওয়ার সময় ১ নং আসামী ১। রাসেল মাহাবুবুল @ রাসেল(৪৩) সহ ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ভিকটিমকে র্যাবের পরিচয় দিয়ে গাড়িতে তোলে এবং পাঁচ লক্ষ টাকা ছিনতাইপূর্বক পাশবিক নির্যাতন করে ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়। গতকালকে ভিকটিম নিজেই অভিযানস্থলে আসামী রাসেলকে শনাক্ত করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply